সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবতী’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১ ডিসেম্বর। কিন্তু নানা জটিলতায় ছবিটি এখনো চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে। এই ছবির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ এনেছেন ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল ‘করনি সেনা’র সদস্যরা। সিনেমায় রাজপুত রানি পদ্মিনীকে ‘অপমান’ করার দায়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যক্তিদের রোষের শিকার হন ‘পদ্মাবতী’র চরিত্রে অভিনয় করা নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন আর নির্মাতা বানসালি। তবু সব হুমকি উপেক্ষা করে নির্মাতা ঠিকই এগিয়ে যান। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ছবির শুটিং শেষ করেন। পোস্টার, টিজার, ট্রেলার, গান একে একে সব প্রকাশ করেন। কিন্তু ছবি মুক্তির কয়েক দিন আগে তা সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনে (সিবিএফসি) পেশ করা হয়। ‘পদ্মাবতী’কে ছাড়পত্র নিতে অসম্মতি জানায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এবার বোর্ড-প্রধান প্রসূন যোশি রাজস্থানের মেওয়ার রাজ্যের রাজপরিবারের এক সদস্যকে তাঁদের প্যানেলে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রসূন যোশি গত বৃহস্পতিবার মেওয়ারের রাজপরিবারের সদস্য ও রানি পদ্মাবতীর উত্তরসূরি বিশ্বরাজ সিংকে চিঠি পাঠিয়েছেন। হিন্দুস্তান টাইমসকে বিশ্বরাজ বলেন, সেই চিঠিতে তাঁকে প্যানেলে যুক্ত হয়ে ‘পদ্মাবতী’ ছবি দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ, তাঁর মতামত ছাড়া ‘পদ্মাবতী’কে ছাড়পত্র দিতে চায় না সিবিএফসি। কিন্তু এখনই তাঁদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন না বিশ্বরাজ সিং।
প্রসূন যোশির পাঠানো চিঠির জবাবে তিনি জানিয়েছেন, কয়েকটি দিক সম্পর্কে পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই ছবির সেন্সর কমিটির সঙ্গে বসতে চান না। একজন রাজপুত হিসেবে তিনি সবার আগে তাঁর সম্প্রদায় ও ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষা করবেন বলে জানান। বিশ্বরাজ সিং আরও জানান, সিবিএফসির ওয়েবসাইটে উল্লেখিত ই-মেইল ঠিকানায় তিনি গত ১১ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বরের তাঁর আপত্তির কথা জানিয়ে দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেন্সর বোর্ড থেকে এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাননি।
এদিকে ‘পদ্মাবতী’ ছবি নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন কয়েকজন ইতিহাসবিদ বলেন, বাস্তবে রানি পদ্মিনীর নামে কোনো চরিত্রের অস্তিত্ব নেই। পদ্মাবতী নিছক কবির কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। এতে রাজপুতেরা আরও চটে যান। তবে, সিবিএফসি অন্য কারণে ‘পদ্মাবতী’র ছাড়পত্র আটকে রেখেছে। বোর্ডে জমা দেওয়ার সময় এর নির্মাতারা কোথাও উল্লেখ করেননি এটি ঐতিহাসিক ছবি না পুরোটাই কাল্পনিক। নিয়মবহির্ভূত উপায়ে সিনেমা পেশ করায় তখন ছবির ছাড়পত্র দেওয়া থেকে বিরত থাকে বোর্ড। তা ছাড়া বানসালি ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই কয়েকজন সাংবাদিকের জন্য ‘পদ্মাবতী’র বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। তাতে নাখোশ হন প্রসূন। তার ওপর রাজনৈতিক চাপ তো আছেই। নিজেরা ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য এবার রাজপরিবারের সদস্যকে নিজেদের প্যানেলে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিএফসি। তবে, এরপরও ঝামেলার অবসান হয় কি না, তা ভবিষ্যৎই বলবে। হিন্দুস্তান টাইমস।