ভারত নিয়ন্ত্রীত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪৪ জন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহতের ঘটনার তদন্তে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বৃহস্পতিবারের এ হামলার ঘটনায় ভারত সরকার পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করার পর মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতের মাধ্যমে এ বিষয় নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার তদন্তে ভারতকে সহায়তা করতে প্রস্তুত পাকিস্তান। তবে এ দ্বন্দের সমাধান যুদ্ধ নয়, আলোচনা।- খবর বিবিসি’র।
ইমরান খান বলেন, ভারত সরকার এ ঘটনায় যেমন তদন্ত চায়, তেমন তদন্ত আমি তাদের করে দিতে চাই, আমরা প্রস্তুত। আমরা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলতেও প্রস্তুত আছি। আপনারা কি মনে করেন যুদ্ধ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? এ সমস্যার সমাধান সম্ভব শুধুমাত্র আলোচনা দিয়ে, ঠিক আফগানিস্তান ইস্যুর মতো।
তিনি বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে তবে ইসলামাবাদ বসে থাকবে না। তারাও পাল্টা হামলা চালাবে।
বিবৃতির প্রথমেই তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরের কারণে এ পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে তার পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয়নি। তবে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সফরের প্রাক্কালে পাকিস্তান এ হামলা চালিয়েছে- এ ব্যাপারে সব ধরনের সম্ভাবনাই নাকচ করে দেন তিনি।
ইমরান খান বলেন, ভারত সব সময়েই কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে থাকে। তিনি বলেন, যদি ভারতের কাছে কোনো প্রমাণ থাকে, তাহলে তাদের উচিত আমাদেরকে তা প্রদান করা। আমরা সেক্ষেত্রে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমি এ হামলার পিছনে দায়ীদের খুঁজে বের করতে যে কোনো তদন্তকে স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, ভারতের গণমাধ্যমে পাকিস্তানে আক্রমনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। যদি ভারত আমাদের আক্রমণ করে, তাহলে আমরা আর এ বিষয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনায় যাবো না বরং পাল্টা হামলা চালাবো।
ইমরান খান আরো বলেন, আমরা যখনই কাশ্মীরের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে যাই, তখনই ভারত এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে।
তিনি বলেন, এতে আমাদের কোনো লাভ নেই যে, কেউ এখান থেকে গিয়ে অন্য কোথাও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসবে, বা অন্য কোনো জায়গা থেকে এসে এখানে সন্ত্রাস চালাবে।
১৪ ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় হামলার পর থেকে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি আক্রমণাত্মক পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। তারা অভিযোগ করছে এ হামলার পিছনে পাকিস্তানের সমর্থন রয়েছে।
ইমরান খান আরো বলেন, ভারতের উপলব্ধি করা উচিত, বিতর্কিত এই ইস্যুটির জবাব কেবল কাশ্মীরে সামরিক হামলা চালানোর মধ্যেই নিহিত নেই। বরং ভারতের উচিত তাদের নীতিগুলো পর্যালোচনা করা।
তিনি দাবি করেন, বারবার এমন দোষারোপ করতে থাকলে আলোচনার পথে কোনোদিনও এগুনো যাবে না। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে কোনো আলোচনায় প্রস্তুত। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের কারণে জন্য পাকিস্তানেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এতে কোনো হাত নেই।
মঙ্গলবার ইমরান খান সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে তার অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবিটিতে দেখা যায় তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, আমার দেশের সঙ্গে লাগতে এসোনা।
গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের একটি গাড়িবহরের ওপর আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয় ওই বাহিনীর ৪৪ জন সদস্য। এতে আহত হয় আরো ৮৫ জন। পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জয়েশ-ই মোহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে।
গেল রোববার রাতে জয়েশ-ই মোহাম্মদের কয়েকজন সদস্য লুকিয়ে আছে এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এক মেজরসহ নিরাপত্তাবাহিনীর চারজন সদস্য, জয়েশ-ই মোহাম্মদের দুই সদস্য ও একজন বেসামরিক লোক নিহত হয়।