ফেনী-১ আসনে নৌকাকে ডুবাতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন শত শত গাড়িবহর নিয়ে তিনি তার মতো করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে বসে নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন তিনি। আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও মূলত আওয়ামী ঘরানার অনেক নেতাকর্মী তার পেছনে ছুটছেন। প্রচারণায়ও তিনি নৌকার প্রার্থী থেকে এগিয়ে রয়েছেন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তার শোডাউন বেড়ে চলছে।স্বতঃস্ফূর্ততা রয়েছে তার প্রচারণায়। এ আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন যুবদল নেতা মুন্সি রফিকুল আলম মজনু। জানা যায়,ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী শেখ আবদুল্লাহ ফুলগাজী উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সব সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকে তার প্রচারে শামিল করতে পেরেছেন। গণসংযোগের শুরু থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন। শিরীন আখতারের জন্য মাঠে রয়েছেন ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম। তবে এ উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন মজুমদার বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন। তিনি তার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করছেন। এদিকে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মজুমদার, সদস্য ভিপি নুরুল আমিন, আমজাদ হাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর হোসেন মীরু, মুন্সিরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মজিবুল হক, ফুলগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সালেহ আহমদ মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক একরাম পাটোয়ারিসহ শতাধিক নেতা নৌকা প্রতীকের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে প্রকাশ্যে নির্বাচন করছেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকার প্রার্থীর নিশ্চিত পরাজয় হবে। তবে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম বলেন, তাদের প্রত্যাশা শেখ আবদুল্লাহ তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন।না করলে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এসএম শহীদ উল্যাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যেহেতু শেখ আবদুল্লাহ ভোট করছে, সেহেতু আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে তার বহিষ্কারের দাবি করছি। সে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে। সে জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং যারা নেপথ্যে তাকে সহযোগিতা করছে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ ঐক্যবদ্ধভাবে জোটের প্রার্থী হিসেবে শিরীন আখতারের জন্য আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মাস্টার আবুল কালাম রোববার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘চরিত্র বিক্রির মহোৎসব চলছে। চরিত্র বিক্রির স্থান বর্তমান ভোটের বাজার।’ একইদিন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রানা তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করে কী পাননি আপনারা? অথচ আজকে আওয়ামী লীগ অফিসে জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৌকার প্রার্থীর বদলে নৌকার বিরোধী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বৈঠক করলেন। দয়া করে নিজের বিবেকের কাছে নিজেই প্রশ্ন করে দেখুন কী করতে যাচ্ছেন আপনারা? ’ ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন অভি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ আপনারা সবসময় নিজের পকেটের চিন্তাই করে গেলেন, আর আমার ছাত্রলীগের ভাইয়েরা রাজপথে শেখ হাসিনার অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে আছে।’ ছাগলনাইয়ার রাধানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল কাদের ফরায়েজী জানান, নেতাদের দ্বিমুখী নিদের্শনা পেয়ে তিনি নিজেও বিব্রত বোধ করছেন। পরিষ্কার হচ্ছে না, আমাদের প্রার্থী কে? আওয়ামী লীগের কেউ আপেল, কেউ নৌকার জন্য ভোট চাওয়া দেখে সাধারণ মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার এ আসনে মহাজোটের এমপি ছিলেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের কোনো কাজে আসেননি। সে জন্য এবার আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।’ দলের অফিসে বসে শেখ আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুদ্দিন বুলু মজুমদার বলেন, ‘দলের কার্যালয় খোলা থাকে। কেউ ভেতরে ঢুকে কুশলবিনিময় করলে আমাদের কী করার আছে। আমরা তো নৌকার বাইরে গিয়ে অন্য কোনো প্রতীকের জন্য ভোট চাইনি।’ আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। শিরীন আখতার এমপি হয়ে তেমন কোনো কাজ করেননি। ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারী হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছেন। জনগণ আওয়ামী লীগের প্রার্থী চায়। এলাকার উন্নয়নের জন্য জনগণই তাকে প্রার্থী করিয়েছেন বলে তিনি সাংবাদিকের কাছে দাবি করেন। মহাজোট মনোনীত প্রার্থী শিরীন আখতার মঙ্গলবার বলেন, ‘আমি শেখ আবদুল্লাহকে আজকেও প্রত্যাহার করতে বলেছি। প্রচারণা বন্ধ করতে বলেছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নেবে।’ উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য ছিলেন এ আসনে। এবার তার পরিবর্তে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি মুন্সি রফিকুল আলম মজনু।