বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সংস্থাটি বলছে, এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশের নারীরাই সন্তান জন্মদানের জন্য সক্ষম অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত হন।
কিন্তু রোগটি নিয়ে নারীদের মধ্যে সচেতনতা কতটা রয়েছে? আর রোগ চিহ্নিত হবার পর চিকিৎসাই বা তারা কতটা পান?
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ঢাকার শাহবাগে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের আউটডোরে গিয়ে দেখা হয় পুরানো ঢাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগম। পঞ্চাশের ওপর বয়স, বলছিলেন গত ১৪ বছর ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২০০২ সালে যখন রোগ ধরা পড়ার দু বছর আগ থেকে তিনি উপসর্গে ভুগছিলেন।
“খালি পেশাব হত, পিপাসা লাগত, আর খিদা লাগত। পরে এক ভাগ্নি বারডেম নিয়া আসলো। টেস্টের পর জানলাম ডায়াবেটিস।” পাশেই টিকেট কেটে চিকিৎসকের ঘরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন, মধ্য বাড্ডার উদ্যোক্তা তানিয়া আর্জুমান্দ। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে, পরিবারের সবাই বলেছিল রক্ত শূন্যতা হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা করার পর জানা গেল, তার টাইপ টু ডায়াবেটিস হয়েছে।
“আমার ওজন অনেক কমে গিয়েছিল, মুখ শুকিয়ে যেত আর খুব ক্লান্ত লাগত। এখন রোজ চল্লিশ মিনিট হাটতে বলেছে, আর ডায়েট চার্ট দিয়েছে, সেটা মেনে চলতে হবে।” বারডেম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এক দশকে নারী রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এক সময় ডায়াবেটিসকে বড়লোকের রোগ ভাবা হলেও, এখন তারা সব বয়স আর শ্রেণীর রোগী পাচ্ছেন।
বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক মোঃ. দেলোয়ার হোসেন বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা দেখেছেন প্রতি দশ জন নারীর মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস আছে। আর এজন্য এখনকার জীবনযাত্রাকেই সবচেয়ে বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন।
“মূল কারণ আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন। কায়িক পরিশ্রম নাই, বসে থাকা হয় বেশি। আর নারীদের আক্রান্ত বেশি হবার কারণ, তারা সংসারের অনেক কাজ করেন, সংসার সামলানো, সন্তান প্রতিপালনসহ সব করার পরে নিজের দিকে নজর দেন না তারা। ডায়াবেটিস হলেও সেটার চিকিৎসায় নজর দেন না অনেকেই।”
ডা হোসেন বলছিলেন, ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় খাদ্যাভ্যাস এবং কায়িক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তী হতে হবে একজন রোগীকে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা সেটি মেনে চলতে পারেন না।
ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে আরো কি কি ঝুঁকি তৈরি হয় সে বিষয়ে উদাসীনতা এবং অসচেতনাকেই এর পেছনে রয়েছে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদেরও অসচেতনতা নারীদের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭১ লাখের বেশি, এর মধ্যে নারী রোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি।