আপনার বাচ্চা কি মোটা হয়ে যাচ্ছে? অনেক বাবা, মায়েরাই এখন এই সমস্যায় পড়ছেন। ছোট বয়সেই ওজন বেড়ে যাচ্ছে সন্তানের। যা থেকে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। কেন ওজন বাড়ে বাচ্চাদের জানেন? বাচ্চা থেকে বড়, সব বয়সেই ঝোঁক বাড়ছে জাঙ্ক ফুড খাওয়া দিকে। বাড়ির খাবার খাওয়ার বদলে বাইরের খাবার, বার্গার, প্যাস্ট্রি খেতে পছন্দ করছে বাচ্চারা। ফলে একদিকে যেমন ওজন বাড়ছে, অন্যদিকে অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে পুষ্টি। বাবা, মায়েরা এখন ছোট বয়স থেকেই বাচ্চাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ভিডিও গেম, ট্যাবলেট। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে বসে খেলতে খেলতে অলস হয়ে যাচ্ছে বাচ্চারা, বাড়ছে ওজন। পড়াশোনার চাপে সময়ের অভাব, খেলার জায়গার অভাবের কারণে বাচ্চাদের মধ্যে থেকে খেলাধুলো, এক্সারসাইজের অভ্যাস একেবারেই হারিয়ে গিয়েছে। ফলে একদিকে তারা যেমন মোটা হয়ে যাচ্ছে, তেমনই নষ্ট হচ্ছে ফিটনেসও। অনেক পরিবারে মোটা হওয়ার ধাত থাকে। বাবা, মায়ের থেকে জিনগত কারণে মোটা হওয়ার ধাত পেয়ে থাকে বাচ্চারা।
এমনটা হলে কিন্তু শুরু থেকেই সজাগ থাকতে হবে অভিভাবকদের। আমাদের মতো বাচ্চারাও কিন্তু নানা রকম স্ট্রেসে ভোগে। পড়াশোনার চাপ, স্কুল, পরিবার নানা কারণে ওদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি হয়। যা থেকে ওজন বাড়ে বাচ্চাদের।
পর্যাপ্ত ঘুম: স্কুল স্তর পর্যন্ত শিশুর বুদ্ধি ও দেহের বিকাশ ঘটে। তাই এই সময় ঘুমে কোপ বসালে অসুখ সেই জায়গাটা পূরণ করবে। তাই যতই পরীক্ষা-পড়াশোনাজনিত চাপ থাকুক না কেন ঘুমের সময় কোনও ভাবেই সাত-আট ঘণ্টার কম করা যাবে না।
খাওয়া: পুষ্টিবিদের কাছে যান শিশুকে নিয়ে। ওর নির্দিষ্ট বয়সে ডায়েট চার্ট ঠিক কেমন হবে তা মেনে চলুন তাঁদের পরামর্শ মতো। ডায়েট মানেই শিশুর সব প্রিয় খাদ্য বাদ, এমন নয়। চাইল্ড ডায়েটে চকোলেটও থাকে। তাই ভয় নেই। কেবল দরকার কতটা খাবে আর কখন খাবে তা নিয়ে পরিমিতিবোধ। যা কিনা এই ডায়েট থেকে পাবেন।
স্ট্রেস: মানসিক চাপ বাড়তে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না। সকলের মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি সমান হয় না। স্রেফ পড়াশোনা দিয়েই যে বড় হতে হবে এমনও নয়। বরং ওর আগ্রহের জায়গা খুঁজে বার করুন। সেটাতেই জোর দিন। অনেক অভিভাবক বুঝেই উঠতে পারেন না সন্তান কিসে আগ্রহী। তেমন হলে অকারণ চাপে পড়বেন না। ওকে ওর মতো বড় হতে দিন। একটা বয়সের পর ও ঠিকই ওর দিশা খুঁজে পাবে। অনেকে নিজের অপূর্ণ শখ চাপিয়ে দেন সন্তানের উপর। একেবারেই তা করবেন না। আপনি যা পারেননি তা ও পারবে এই ভাবনার গোড়াতেই গলদ রয়েছে। অন্য কারও সঙ্গে তুলনাও নয়। মনে রাখবেন, দু’জন অন্য মানুষ। তাদের মেধা, বুদ্ধি সবই আলাদা। বরং চাপমুক্ত হয়ে বড় হতে দিন ওকে। রাশ আপনার হাতে থাক, সময়ে-অসময়ে তা কড়া হাতে টানুন, কিন্তু অকারণ ভীতি বা চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।
ফাস্ট ফুড: বায়না মেটাতে যখন তখন বাড়িতেই নুডলস বা ফ্রোজেন ফুড এনে বানিয়ে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন। প্যাকেটবন্দি সুপ ও ঠান্ডা পানীয়ও এড়িয়ে চলুন। এ সবে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও প্রিজারভেটিভসে থাকা সোডিয়াম ফ্যাট বাড়াবেই বাড়াবে। বরং বাড়িতে বানানো খাবার দিন। টিফিনকে মুখরোচক করে তুলতে নতুন নতুন চটজলদি রান্নার রেসিপি জানুন। একান্তই না পারলে হাত-রুটি, মুড়ি, ওটস, চিঁড়ের পোলাও, সপ্তাহান্তে একটু-আধটু লুচি এ সবে আস্থা রাখুন। নিয়ন্ত্রণ রেখে মিষ্টিও দিতে পারেন।
চকোলেট: বায়না মেটাতেই হোক বা খুদে দস্যিকে শান্ত রাখতেই হোক, সব সময় কথায় কথায় চকোলেট একেবারে নয়। দাঁতের ক্ষতি তো বটেই ওজনও হু হু করে বাড়তে পারে এতে। সপ্তাহে দু’টির বেশি চকোলেট বার (ছোট বা মাঝারি আকারের) দেবেন না। তাও যদি ডার্ক চকোলেট হয়, তো খুবই ভাল।
ফ্রিজের জল: ফ্রিজ খুলেই ঢকঢক করে ঠান্ডা জল নিজেও খাবেন না, বাচ্চাকেও দেবেন না। ঠান্ডা জল ওবেসিটির জন্য খুব দায়ী। এই অভ্যাসকে একেবারেই প্রশ্রয় নয়।
পর্যাপ্ত জল: শরীরে জলের অভাব হলে শরীরও সুযোগ বুঝে জল জমিয়ে রাখবে। এতেও শরীর ফোলে। তাই শিশুকে নিয়ম করে জল খাওয়ার অভ্যাস করান।
ভাত কম: সারা দিন ভাত পেটে পড়ল না বলে কান্নাকাটি করবেন না। ভাত কম খেলেই ‘ও কিছু খায় না’ বলে অকারণ দুশ্চিন্তাও নয়। বরং ছোট থেকেই ভাত কম দিন। না দিলেও ক্ষতি নেই। ভাতের জায়গায় দু’-একটি রুটি খাক। ভাত খেলেও পরিমাণে কম দিয়ে সেই খিদে মেটান তরিতরকারি, মাংস, মাছ, পনির, দুধ, টক দই এ সব দিয়ে।
শরীরচর্চা: শুধু পড়াশোনা আর অন্যান্য গুণে দক্ষ করে তুলতে গিয়ে ওর ছুটোছুটি করার সময়টা কেড়ে নেবেন না। খেলার মাঠ সে ভাবে না থাকলে বা খেলার সঙ্গী না পেলে যে কোনও যোগাসন ক্লাসে বা সাঁতারে ভর্তি করে দিন। এটাকেও পেশার মতো নিয়ে নেবেন না। হালকা চালেই অভ্যাস চলুক, স্রেফ শরীর ঠিক রাখতে।