খয়রাত শব্দের অর্থ হলো দান করা বা ভিক্ষে। যদি আপনি কাউকে খয়রাত করেন,
সেটা অর্থ হতে পারে বা কোনো সম্পদ আপনি সেটি গ্রহিতার কাছে চাইতে পারবেন
না। আপনি যখন কোনো দরিদ্র মানুষকে খয়রাত দেন সেই অর্থ আপনি ফেরত নেবেন
না সে কারণে দেন। আনন্দবাজার সহ (আনন্দবাজারে এই নিউজটি এখন দেখছি না)
বাংলা অনলাইনগুলো লিখেছে ‘বাণিজ্যিক লগ্নি ও খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে
বাংলাদেশকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করছে চীন।’ এর অর্থ হলো চীনের কাছ থেকে
বাংলাদেশ এমন অর্থ নেয় যা গ্রান্ট হিসেবে দেখা হয়, যে অর্থ ফেরত দেওয়া লাগে
না। সে্টি গ্রান্টকে কটাক্ষ করে ভারতীয় পত্রিকাগুলো লিখেছে এটি খয়রাতি
অর্থ। মানে বাংলাদেশকে ভিক্ষে দিচ্ছে চীন। গরিব হলে দান বা ভিক্ষে নিতে আমি
অসুবিধা দেখি না। পেটে খিদে রেখে আমি কেন বড়লোকের ভান দেখাব। ভারতের
পত্রিকা যেভাবে বাংলাদেশকে ভিক্ষুক বললো তাতে আমার লাগেনি. বাংলাদেশ গরিব
সেটা কেউ বললে কেন লাগবে?
কিন্তু ভারত কী জমিদার? মানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা যার রাজকোষ লুট করতেই ব্রিটিশ দস্যুদের কয়েকদিন লেগে গিয়েছিল?
ভারতের ৬০ ভাগ মানুষের পায়খানা করার জন্য টয়লেট নেই। তারা বাগানে. খেতে উন্মুক্ত হাগে। বিশ্বাস হয় না?
ভারতের যে কোনো একটি ট্রেনে চেপে বসেন। ভোরবেলা যখন মধ্যপ্রদেশ দিয়ে
ট্রেন যাবে দেখবেন সারসার নারী পুরুষ ক্ষেতে বসে হাগছে। বিশ্বাস হলে না?
তাহলে ভারতের হিন্দি মুভি দেখুন. সেটা সম্ভবত চেন্নাই এক্সপ্রেস ভুল হলে
অন্যরা ধরিয়ে দিয়েন। সেখানে দেখা যাচ্ছে ক্ষেতে বসে হাগতে দেখবেন। কলকাতার
একটা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম জিতের। নায়কের বাবা মারা গেছে নায়িকার কাছে
ছেলের প্রেমের কথা বলায়। সেই প্রেমিকার বিয়েতেই ছেলে জিত গেছে গ্রামে। সেই
গ্রামে এরকম হাগার দৃশ্য আমি দেখেছি। সিনেমা দুটির নাম ঠিক ঠাক পারলে
অন্যরা যুক্ত করে দিয়েন। না হয় ভারত প্রেমিকেরা কিন্তু এসে আক্রমণ শুরু
করবে যে আমি মিথ্যা তথ্য দিচ্ছি। আমি হাফ লাই বলি, এটি মূলত ফুল লাই।
এবার আসি খোদ ভারতের সরকারি ডেটায়। দেশটিতে ২০১১ সালের সেনসাস উদ্বৃত করে বিবিসি ১৪ মার্চ ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের ৪৯.৮ শতাংশ মানুষ খোলা যায়গায় পায়খানা করে। আর টাইম অব ইন্ডিয়ার গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেওয়া তথ্যমতে, ২০১১ সেনসাস অনুযায়ী ৬৯.৩ শতাংশ মানুষের টয়লেট নেই। এর মধ্যে যে গণমাধ্যমের তথ্য আপনার সুবিধা হয় সেটি নিতে পারেন আপত্তি নেই। তবে আগ্রহী পাঠক সার্স করে মূল সেনসাসটাও খতিয়ে দেখতে পারেন।
তবে দ্য হিন্দু
২০১৬ সালের ২ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে খোলা জায়গা
হাগা করা লোক সংখ্যা কিছু কমেনি। পত্রিকাটি সিবিএম বা হাগো টয়লেটে
কর্মসূচীর ওপর National Sample Survey Office (NSSO) এর ২০১৫ সালের জরিপে
বলা হচ্ছে ৫২.১ শতাংশ মানুষ খোলা জায়গায় হাগে বলে জানিয়েছে। ওই
প্রতিবেদনে জানানো হয়, খোলা জায়গা হাগার বিষয়ে ভারত দুনিয়ার মধ্যে এক
নম্বর তালিকায়। এমন কী তাদের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান এ বিষয়ে তাদের নিচে।
বিজেপি সরকার আসার পর ২০১৪ সালে খোলা জায়গায় হাগুর বদলে টয়লেট বানিয়ে
দেবার জন্য রিতিমত একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটির নাম Swachh Bharat
Mission (SBM)। সিবিএম প্রগামের মাধ্যমে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত ৯.৫ কোটি
টয়লেট বানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে। এই নিউজটি
পাবেন টাইম অব ইন্ডিয়ার গত ১২ ফেব্রুয়ারি টাইম অব ইন্ডিয়াতে একদল গবেষকের
লেখায়।
খোলা জায়গা পায়খানা করা নিয়ে আর আলোচনা করব না।
মূল আলোচনা খয়রাতি।
দুনিয়ার এক নম্বর খয়রাতি দেশ ভারত
The Organisation for Economic Co-operation and Development (OECD) দেওয়া
তথ্য অনুযায়ী দুনিয়াতে সব থেকে বেশি খয়রাত বা ভিক্ষে গ্রহণ করে ভারত।
দেশটিতে ৩.৯৬৩ বিলিয়ন ডলার বছরে ভিক্ষে পায়। ১০টি ভিক্ষুক দেশের তালিকা
ওইসিডি করেছে সেখানে বাংলাদেশের পজিশন পাঁচ নম্বরে। আমি ওইসিডির সাইট থেকে
একটা গ্রাফের লিংক দিচ্ছি আগ্রহীরা দেখতে পারেন https://tabsoft.co/2Ym4HK5
মূল রিপোর্ট অনেক বড়। মূল রিপোর্ট দেখতে চাইলে এই গ্রাফের নিচে লিংক আছে সেখানে গিয়েও দেখতে পারেন।
আর দীর্ঘ মেয়াদে সব থেকে বেশি খয়রাত ভারত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে।
টাইম অব ইন্ডিয়ার ১৬ জুলাই ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত
১৯৪৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৬৫ বিলিয়ন ডলার খয়রাত নিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান ইউএসএইড থেকে। এই বিপুল সংখ্যাক অর্থ
খয়রাত বা ভিক্ষে করাটাকে ভারতের জনগণ অপমান বা খারাপ কিছু মনে করে না। বরং
তারা মনে করে যে তাদের এই ভিক্ষে বা খয়রাতি পাওয়া উচিত। গত বছরের
জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতের
৯৫ ভাগ মানুষ মনে করে তাদেয় ভিক্ষে দিক ধনি দেশগুলো। এই প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে ভারতের মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ মনে করে ধনি দেশগুলো ভারতের জন্য
যথেষ্ট করেছে। মানে ধনি দেশগুলোর কাছ খেকে আরো অধিক পরিমান ভিক্ষে পাওয়া
উচিত এমন মনে করা লোকের সংখ্যাই তাহলে অনেক বেশি। এই ইনডেক্সে বাংলাদেশের
অবস্থান ভারত থেকে কিছুটা ভাল। বাংলাদেশের ৪৬ ভাগ মানুষ মনে করেন ধনি
দেশগুলো তাদের দেশের জন্য যথেষ্ট করেছে।
ভারত একটা রাজা ধীরাজের দেশ।
তার সাথে বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশের তুলনাই হয় না। সেটা করাও হচ্ছে না।
আমি শুধু এই দুটি ইনডেক্স উল্লেখ করলাম এ কারণে যে, এতে একটি জনপদের মধ্যে
মানুষের চিন্তার প্যাটার্ন বোঝার জন্য। গরিব হলেও এখানে আমরা ভারতের থেকে
এগিয়ে আছি।
চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ কত গ্রান্ট বা খয়রাতি পেয়েছে
তার বছরভিত্তিক কোনো তথ্য পেলাম না। ডেইলিস্টার ১২ জুলাই ২০১৯ এর এক
প্রতিবেদনে বলছে, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ একটি সমাজকল্যান কাজে ৭২.৫৭
মিলিয়ন ডলার সাহায্য পাচ্ছে বা গ্রান্ট আর আনন্দবাজারের ভাষায় খয়রাতি। ৩০
মার্চ ২০১২ সালে সিনহুয়ার এক প্রদতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চীন বাংলাদেশকে ১৫০
মিলিয়ন ডলার খয়রাত দিচ্ছে। এরকম টুকটাক খয়রাতের কিছু রিপোর্ট পাওয়া গেছে
ভারতের পত্রিকা ইকোনিমক টাইমের ২৩ জুলাই ২০০৭ সালে। সেখানে বলা হচ্ছে চীন
বাংলাদেশেকে ১০.৫ মিলিয়ন ডলার ভিক্ষে দিচ্ছে।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের
যন্ত্রনাটি অন্য জায়গায়। সেটি হলো এক সময় সব থেকে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি
বাংলাদেশের ছিল ভারতের সাথে। এখন ভারতের সাথে বাণিজ্য কমে গিয়ে বেড়েছে
চীনের সাথে। এ ছাড়া ২০১১ সালে যেখানে চীনা বিনিয়োগ ছিল বাংলাদেশে মাত্র
২০০ মিলিয়ন ডলার, সেটি এখন বেড়ে আগামি বছরের মধ্যে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌছবে
বলে মনে করা হচ্ছে।
এবার বোঝা গেলো ভারতের পত্রিকাগুলো কেন আপনাকে খয়রাতি বলছে?
প্রথম ছবিটি আনন্দবাজারের খবরের স্ক্রীনশট। পরের ছবিটি ডাওনটুআর্থের আর পরেরটা দ্য হিন্দু থেকে নেওয়া।