রক্ত দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই তো রক্তকে সবসময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। অনেকেই ভেবে থাকবেন! রক্ত তো শরীরের ভেতরে থাকে তাহলে আবার সেটা কীভাবে দূষিত হবে? ধুলা-বালিতে নয় বরং শারীরিক জটিলতার কারণেই রক্ত দূষিত হয়ে থাকে। মুখে ব্রণ ও সোরিয়াসিস নামে এক ধরনের ত্বকের রোগও কিন্তু রক্ত দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়। তবে সঠিক কিছু খাবার রক্তকে দূষণমুক্ত রাখতে সক্ষম। রক্ত বিশুদ্ধ থাকলে ত্বকের রোগ তো দূরে থাকবেই, সেই সঙ্গে শরীরও একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এমন কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা আছে যা মেনে চললেই রক্ত দূষিত হওয়া রোধ করা যায়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক রক্ত বিশুদ্ধ করার ঘরোয়া উপায় ও খাদ্যগুলো-
১. করলা: তেঁতো খাবার খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়, ফলে নানা রোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর বেঁচে থাকে। করলায় প্রচুর মাত্রায় ডিটোক্সিফাই এজেন্ট রয়েছে, যা রক্ত থেকে ক্ষতিকর উপাদানকে টেনে টেনে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে সোরিয়ায়িস এবং ব্রণের মতো ত্বকের রোগের প্রকোপ যেমন কমে, তেমনি নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
২. বিটরুট: লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিটরুট দারুণ কাজে আসে। আর একবার লিভার চাঙ্গা হয়ে গেলে শরীর থেকে বিনা বাঁধায় ক্ষতিকর সব বিষাক্ত উপাদানগুলোও খুব সহজে বেরিয়ে যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপার্টিজ, যা শরীরকে নানা ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে রক্ষা করে।
৩. গাজর: এই সবজিটিতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ভিটামিন- এ, বি, সি এবং কে এবং পটাশিয়াম। এই সবক’টি উপাদানই শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে দারুণ কাজে আসে। গাজরে রয়েছে গ্লুটেথিয়ান নামে একটি উপাদান, যা একপ্রকার ক্লিন্জিং এজেন্ট অর্থাৎ রক্তকে পরিষ্কার করতে এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রক্ত দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণে সরিয়াসিসসহ যেসব ত্বকের রোগ হয়, সেগুলোর প্রতিরোধেও গাজর উপকারি। তাই যখনই বুঝবেন রক্ত দূষিত হতে শুরু শুরু করেছে, গাজর খাওয়া শুরু করবেন, দেখবেন দারুন ফল পাবেন।
৪. লেবু: নানাভাবে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয় লেবু। ফলে রক্ত খারাপ হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকেনা। এছাড়া লেবুর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে উপস্থিত বিশেষ কিছু এনজাইমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই এনজাইমগুলো শরীরে উপস্থিত টক্সিনগুল্মকে দ্রবণীয় উপাদানে পরিবর্তিত করে দেয়। ফলে সেগুলো সহজে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এতে শরীরে টক্সিনের মাত্রা যত কমবে, তত রক্ত বিশুদ্ধ থাকবে।
৫. জাম: রক্ত শুদ্ধ করতে জামের কোনো বিকল্প নেই। শুধু তাই নয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এই ফলটি দারুণ কাজে আসে। ফলে যদি শরীর সুস্থ রাখতে চান তাহলে জাম খান।
৬. গুঁড়: গুঁড়ে থাকা ফাইবার, পাকস্থলিতে থাকা ক্ষতিকর উপাদানদের বের করে দেয়। রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে গুঁড় নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে জমতে থাকা বর্জ্য পদার্থদের দেহের বাইরে বের করে দিতেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রক্তকে বিষ মুক্ত রাখতে নিয়মিত অল্প পরিমাণ গুঁড় দুধে গুলে খেতে পারেন।
৭. ব্রকলি: রক্তের কোণায় কোণায় লুকিয়ে থাকা ময়লাকে টেনে বের করতে ব্রকলি দারুণ কার্যকরী। এতে প্রচুর মাত্রায় ডিটক্স এজেন্ট বা ময়লা বের করে দেয়ার উপাদান রয়েছে। তাই যদি প্রতিদিন এই সবজিটি খাওয়া যায় তবে রক্ত ময়লা হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকেনা।
৮. রসুন: হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে শরীরকে সুস্থ রাখতে রসুনের কোনো বিকল্প নেই। এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ রক্তে জমা হওয়া নানাবিধ জীবাণুকে মেরে ফেলে শরীরকে বিষ মুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. আদা: নানা রোগের চিকিৎসায় আদা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে কার্কিউমিন নামে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর মাত্রায় রয়েছে, যা রক্তকে শুদ্ধ করার পাশাপাশি একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো প্রতিদিন যদি অল্প করে হলুদ খাওয়া যায়, তাহলে কিডনির কর্মক্ষমতা এবং হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, ফলে শরীর থেকে টক্সিন বেশি মাত্রায় বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।