রাজ্যে এ বার লোকসভা ভোটে দলের ধাক্কা খাওয়ার মূল দায় ধর্মীয় মেরুকরণের উপরেই দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক ভোট আমি করি না।’’ আবার তারই পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগের জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমি তো তোষণ করি। হাজার বার করব! যে গরু দুধ দেয়, তার লাথিও ভাল!’’
গত বারের ৩৪ থেকে এ বার লোকসভায় ২২ আসনে নেমে এসেছে তৃণমূল। ধাক্কা খাওয়ার পরে শনিবার দলের পর্যালোচনা বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাত, বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) কারচুপি, বিজেপির টাকার খেলা এবং সিপিএমের ভোট বিজেপিতে যাওয়াকে দোযারোপ করছেন মমতা। দলের কয়েক জন বিজেপির টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করার বাইরে সাংগঠনিক ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে বিশেষ কাটাছেঁড়া করেননি তিনি। জেলা স্তরে দায়িত্বের কিছু রদবদল করেছেন। তবে প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারি কাজের চেয়ে নিজে দলের কাজই এখন থেকে দেখবেন বেশি। তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, দল তথা সংগঠনের কাজ যে ঠিক পথে চলছে না, মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের মধ্যেই তা স্বীকার ও নজর দেওয়ার ইঙ্গিত আছে।
রাজ্যে আসন হারানোর জন্য ধর্মীয় মেরুকরণকেই প্রধানত দায়ী করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হিন্দু-মুসলিম করা হয়েছে। আমি নরেন্দ্র মোদীকে জেতার জন্য অভিনন্দন জানিয়েও বলছি, এই তত্ত্ব মানি না। তাতে একা হয়ে গেলেও এটা বলব।’’ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, মেরুকরণের রাজনীতি করে গোটা দেশেই বিজেপি সফল। তাই বাংলায় তৃণমূলের কিছু আসন হারানোকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়।
মেরুকরণের রাজনীতির সূত্রেই এসেছিল তাঁর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগের প্রসঙ্গ। জবাবে বৈঠকের পরে মমতা সাফ বলেছেন, ‘‘আমি তো তোষণ করি! হাজার বার তোষণ করব! যে ডাকবে, সেখানেই যাব। যে গরু দুধ দেয়, তার লাথিও ভাল!’’ আগামী ৩১ মে পার্ক সার্কাস ময়দানে কলকাতা পুরসভার ইফতারে তিনি যাবেন।
লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশই এ বার তৃণমূলের দিকে গিয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের মতে, বিজেপির উল্টো দিকে মেরুকরণের ফায়দা তৃণমূলও পেয়েছে। দেশে মোদী সরকার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার পরে সংখ্যালঘু সমর্থন আরও জমাট করতে চেয়েই মমতার এ দিনের মন্তব্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের বলেছিলেন, ঘেউ ঘেউ করবেন না এখন সংখ্যালঘুদের বলছেন, গরুর লাথিও ভাল। গরু নিয়ে যে বিজেপি রাজনীতি করে, তাদের মোকাবিলার এটা কী রকম ভঙ্গি?’’
বিজেপি ভোটে জিততে টাকা ছড়িয়েছে এবং কমিশন তাদেরহয়ে কাজ করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ।তাঁর কথায়, ‘‘যা টাকা খরচ করেছে, যে কোনও দুর্নীতিকে হার মানায়। টাকা বিলি করবে বলেই কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিসারদের বদলি করেছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘সিপিএম নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করল!’’
ইভিএম নিয়ে এ বার ভোটের আগে থেকেই সরব ছিলেন মমতা। তার পুনরাবৃত্তি করেছেন এ দিনও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার নিজের ধারণা, একটা প্রোগামিং করা ছিল। ভোটের আগে থেকেই আমার কাছে খবর আসছিল। কিন্তু আমি কী করব? ইভিএম তো ভেঙে দিতে পারি না!’’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যেখানে এক লক্ষ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল হেরেছে, সেখানে আমরা হেরেছি বলে মনে করি না। ওখানেই সেটিং হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এর মধ্যে বাইরের হাত রয়েছে। দেশের স্বার্থে সেটা বললাম না।’’