শখের বসে ২০১৪ সালে মাত্র ১২টি টার্কির বাচ্চা কিনেছিলেন নাজমূল হুদা। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের টিউশনির জমানো আঠারো হাজার টাকায় কেনা টার্কি মুরগির খামার এখন কোটি টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে। তার এই টার্কি খামার এখন এলাকার অন্যদের কাছে সম্ভাবনার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে।
নাজমূল হুদা এখন ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষার্থী।
প্রথমদিকে বাবার ইচ্ছা না থাকলেও পরে বাবা নুরুল আমিন ও তিন বোনের সহযোগিতায় শুরু করেন টার্কি পালন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি নাজমূল হুদাকে। মাত্র চার বছরেই সব খরচ বাদ দিয়ে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। এখন তাদের তিনটি ফার্মে প্রায় ১৫শ টার্কি রয়েছে। টার্কি ছাড়াও সহস্রাধিক কোয়েল, তিতিরসহ দেশীয় প্রজাতির মুরগিও পালন করছেন তারা।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার শিবপুরে তার এই খামার। বাড়ির ভিতর ভিন্ন আকৃতির খাঁচার মধ্যে বিভিন্ন ধাপে রাখা আচে সাদা কালো রংয়ের টার্কি। কোনটাতে বড় টার্কি, কোনটাতে বাচ্চা টার্কি। দেশীয় প্রজাতির মুরগিও আছে টার্কির সাথে।
নুরুল আমিন জানান, ছেলের কিনে আনা টার্কি এখন তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। তিনি জানান, লালমাই ছাড়াও চান্দিনা উপজেলার খিরাশার মোহনপুরে একটি ও বুড়িচং উপজেলার কংশনগর ভারেল্লা এলাকায় একটি মিলে মোট তিনটি টার্কির খামার রয়েছে তাদের। তিনটি ফার্মে অর্ধকোটি টাকার বাচ্চা ও পরিণত টার্কি মুরগি রয়েছে। তিনটি ফার্মের ব্যাপস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন তার তিন মেয়ে। অন্যান্য উপজেলায় টার্কি ফার্ম সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি।
শখের বসে অনেকেই টার্কি পালন করলেও কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে টার্কি মুরগি পালন শুরু হয় লালমাইয়ের নাজমূল হুদার হাত ধরে। প্রকৌশলী নাজমূল হুদার উদ্ভাবিত ইনকিউবেটরে টার্কির বাচ্চা ফুটানো হয় বলে জানান তার বোন কানিজ ফাতেমা। টার্কি চাষে মাসে ৪০-৪৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে টার্কি মুরগির দেখাশোনাতেই সময়কাটে পরিবারের লোকজনের।
টার্কি পালন বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই এবং উপযোগী। সঠিকভাবে পালন করতে পারলে ৮ মাসেই প্রতিটি টার্কি পরিণত হয়ে যায়। দুই বছরের এক একটা টার্কি প্রায় ৮/১০ কেজি ওজনের হয়। প্রতিজোড়া টার্কি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়। টার্কির মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে মুরগির মাংসের বিকল্প হিসেবে এর মাংস ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুপালী মণ্ডল জানান, দেশে যে পরিমাণ বেকার যুবক-যুবতী রয়েছে তারা যদি চাকরির পিছনে না ঘুরে স্বাবলম্বী হতে চায়, সেক্ষেত্রে টার্কি পালন হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় খাত।
যারা টার্কি চাষ করে বেকারত্ব ঘুচাতে চায় তাদের জন্য উপজেলা যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে সনদ দেয়া হয় এবং প্রত্যেক সনদধারীকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, টার্কি চাষে স্বাবলম্বী হতে হলে সবকিছুর উর্ধ্বে আন্তরিক ও পরিশ্রমি হতে হবে। পরিশ্রমের এ কাজটিতে আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নেই।