Sunday, December 22, 2024
Home > আন্তর্জাতিক > রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমান।

রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমান।

রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমান। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী আরও চারটি দেশ চীন, ভারত, থাইল্যান্ড এবং লাওসের রাষ্ট্রদূতরাও ছিলেন এই সফরে। রাখাইনে তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন মিয়ানমারের শীর্ষ মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা।

সফর থেকে ফিরে এসে বিবিসি বাংলা’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সফিউর রহমান বলেছেন, ‘গোটা অঞ্চল জুড়ে মাইলের পর মাইল যে পোড়া বাড়িঘর দেখেছি, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমার মনে হয়েছে এটা হঠাৎ করে হয়নি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এর পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক হাত থাকার ইঙ্গিত মেলে, কিন্তু সাহস করে তারা কারও নাম উচ্চারণ করেন না।’তিনি বলেন, রাখাইনের মানুষগুলোর চোখেমুখে ছিল চরম নিরাপত্তাহীনতার ছাপ। অবর্ণনীয় কষ্টের বিবরণ থেকে বোঝা যায় তাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা শুধু একটা প্রতিবেশী ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাজ হতে পারে না। নিজের গ্রাম থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া এই মানুষেরা তাদের নিজেদের গ্রামে আর ফিরে যেতে চায় না বলে জানিয়েছে।

সফিউর রহমান আরও বলেন, তার সফরসঙ্গী অন্য রাষ্ট্রদূতরাও বিশাল এই মানবিক সঙ্কটের ব্যাপকতা দেখে বিচলিত বলে মনে হয়েছে তার। যত দ্রুত সম্ভব এই সঙ্কট মোকাবিলা করার ব্যাপারেও তারা সবাই একমত হয়েছেন। তবে তারা এটাও বিশ্বাস করেন, এ কাজ একা মিয়ানমারের পক্ষে সম্ভব নয় এ জন্য তাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক সহায়তা লাগবে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। পাঁচ বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বৌদ্ধপ্রধান রাথিডং এলাকার একটি গ্রামে, যেখানে একটি বিচ্ছিন্ন গ্রামে কিছু মুসলিম রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।তারপর রাখাইনের সাগরপাড়ে বেশ কয়েকটি গ্রামও তারা আকাশপথে হেলিকপ্টারে করে ঘুরে দেখেন। পরে তিন-চারটি জায়গায় তাদের গাড়িতে করেও নিয়ে যাওয়া হয়। সব জায়গাতেই সরকারি দোভাষীদের মাধ্যমেই স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে পাঁচ বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের। কথোপকথনের সময় সরকারি কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫ লাখ ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি।

এদিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বলার সময় এখনও হয়নি বলে জানান সংস্থাটির মুখপাত্র। জাতিসংঘ আরও জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে।অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইচ ওয়াচের।স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২১৪টি রোহিঙ্গা অধুষ্যিত গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *