ইরানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হওয়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভে অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, গত সপ্তাহের বিক্ষোভে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর স্নাইপাররা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ভবনের ছাদ থেকে গুলি চালিয়েছে। এছাড়া একটি ঘটনায় হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছোড়া হয়েছে।
অ্যামনেস্টির এমন দাবির প্রেক্ষিতে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
গত ১৫ নভেম্বর ইরানি কর্তৃপক্ষ পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর ফলে প্রতি লিটার পেট্রলের মূল্য ১০ হাজার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজার রিয়ালে দাঁড়ায়। এছাড়া মাসে প্রতিটি ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ৬০ লিটার জ্বালানি বরাদ্দের কথা জানিয়ে নির্ধারিত পরিমাণের বাইরে পেট্রল কিনতে চাইলে প্রত্যেক লিটারের মূল্য ৩০ হাজার রিয়াল করা হয়।
এ ঘোষণার দিনই দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং একপর্যায়ে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত দুই জন নিহত হয়। রাস্তা অবরোধ ছাড়াও বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
রোববার বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইরানের আধা সরকারি ফার্স নিউজ তিন দিনের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ১২ জন বলে দাবি করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২১টি শহরে বিক্ষোভের সময় অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিশ্বাসযোগ্য খবর, নিশ্চিত হওয়া ভিডিও এবং মানবাধিকারকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটি। তাদের দাবি, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কিছু কিছু খবরে নিহতের সংখ্যা ২০০ জনের মতো।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিহতের সংখ্যা প্রমাণ করে ইরানের নিরাপত্তাবাহিনীর বেআইনি হত্যার প্রবণতা। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অত্যাধিক ও প্রাণঘাতী শক্তিপ্রয়োগ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাবাহিনী নিহতদের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি এবং কোনও স্বতন্ত্র ময়নাতদন্ত ছাড়াই দ্রুত দাফন করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এদিকে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইরানের বিক্ষোভে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে তাদের হাতে আসা সর্বশেষ তথ্যমতে গত পাঁচ দিনে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে পাঁচজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং বাকি ছয়জন বেসামরিক নাগরিক। তবে ইরান সরকার বিক্ষোভে হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি।
কিন্তু ইরানের আধাসরকারি বার্তা সংস্থা আইএসএনএ গত সোমবারের এক প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানী তেহরানে পাশে বিক্ষোভকারীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর তিনজন সদস্য নিহত হয়েছেন। একইদিনে ইরান সরকারের মুখপাত্র আলি রাইবেই দাবি করেন যে, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে গোটা দেশের পরিস্থিতি এখন শান্ত।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র ছোটখাটো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে আর আগামীকাল বা তার পরের দিন কোনও দাঙ্গা থাকবে না’। কয়েকটি শহর ও প্রদেশে জমায়েত থাকলেও আগের দিনের তুলনায় তা ৮০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, সোমবার রাতেও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ চলছিল এবং রাজপথে নিরাপত্তাবাহিনী বিরাজ করছে। এসব ভিডিওর সত্যতা রয়টার্সের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বিক্ষোভে ইরানি নাগরিকদের প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও ‘অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের অপচেষ্টা’ চালানোর জন্য অভ্যন্তরীণ বিরোধী শক্তি ও ‘বিদেশি শত্রুদের’ দায়ী করেন তিনি। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির দাবি, এসব গোষ্ঠী ইরানকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।সূত্র: রয়টার্স