কানাডায় পাড়ি জমাতে চাইলে প্রস্তুতি নিতে পারেন এখন থেকেই। কারণ আগামী তিন বছরে ১০ লাখের বেশি নতুন অভিবাসীকে স্বাগত জানাতে চায় দেশটি। উন্নত জীবনযাপন, চাকরি বা পড়াশুনার জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ।
যুক্তরাষ্ট্র যেখানে দিন দিন অভিবাসন নীতি কঠোর করছে, সেখানে উদার অভিবাসন নীতির জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করছে কানাডা। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা কানাডামুখী হচ্ছেন। অবৈধ পথে না গিয়ে বৈধভাবে কানাডা যাওয়ার নানা উপায় রয়েছে। বৈধভাবে বাংলাদেশিদেরও কানাডা যাওয়ার বিভিন্ন সুযোগ নিয়ে এই আয়োজন-
ব্যবসা করতে যেতে পারেন কানাডা:
কানাডায় ব্যবসা করতে চাইলে আপনার জন্য যাওয়াটা সহজ। তবে নিজে ব্যবসা করতে না চাইলে কানাডার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি থাকলেও আপনি যেতে পারবেন। এই ভিসার (নাফটা) জন্য আপনাকে ‘লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট’ (এলএমআইএ) জমা দিতে হবে। তবে এই সুবিধা পেয়ে থাকে শুধুমাত্র চিলি, জর্ডান, পেরু, কলম্বিয়া, লিচেনস্টাইন, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, আইল্যান্ড, নরওয়ে, ইসরাইল এবং পানামার নাগরিকরা।
চাকুরির জন্য কানাডা যেতে পারেন:
উপরের দেশগুলোর নাগরিক না হলে আপনি চাকুরির জন্য কানাডা যেতে পারেন। এজন্য কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানকে আপনাকে চাকুরির অফার লেটার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে। কানাডায় দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য বিশেষ ভিসার সুবিধা চালু রয়েছে। ৩৪৭টি পেশায় এই জনবল নিয়ে থাকে কানাডা। এরমধ্যে হেয়ার স্টাইলিস্ট (নরসুন্দর), বিক্রয় কর্মী এবং প্রশাসনিক সহকারী উল্লেখযোগ্য।
কানাডার নাগরিককে বিয়ে করে:
কানাডায় স্থানীয় হওয়ার সবচেয়ে সহজ ও নিশ্চিত উপায় হচ্ছে কোনো কানাডার নাগরিককে বিয়ে করা। বিয়ে করে কানাডায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে তাকে অন্তত দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই দুই বছর তাকে সরকারি কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করে। তবে এক্ষেত্রে অসততার আশ্রয় নেয়া হয় তাহলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।
নতুন ব্যবসা:
কানাডা উদ্যোক্তাদের ভিসা দিয়ে থাকে। আপনি যদি মনে করেন আপনার নগদ টাকা রয়েছে যা দিয়ে আপনি কানাডায় ব্যবসা করতে পারবেন তাহলে আপনাকে ভিসা দেয়া হতে পারে। নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য কী পরিমাণ পুঁজি দরকার বা আপনার কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। গাইডলাইন অনুসরণ করে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
আইইসি:
১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবকরা ‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা’ (আইইসি) এর আওতায় চাকুরির অফার লেটার ছাড়াই কানাডা যেতে পারে। তবে এই সুবিধা কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। দেশগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, জাপান, নরওয়ে, তাইওয়ান, অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, কোস্টারিকা, হংকং, মেক্সিকো, স্পেইন, ক্রোয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, ইউক্রেইন, ফ্রান্স, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, চিলি, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, চেক রিপাবলিক, ইতালি, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড।
স্ট্যাডি ভিসা:
লেখাপড়া করা জন্য আপনি সহজেই কানাডা যেতে পারেন। তবে এজন্য আপনাকে কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলতে হবে। পাশাপাশি আপনি খণ্ডকালীন বিভিন্ন চাকুরীও করতে পারবেন।
ভ্রমণ ভিসা:
ভ্রমণ ভিসা পাওয়াটা একটু কঠিন! এক্ষেত্রে ভিসা প্রার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করা কেন যেতে চান। দূতাবাসের যে কর্মকর্তা আপনার সাক্ষাৎকার নেবেন তার কাছে যদি মনে হয় ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও আপনার না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে আপনাকে ভিসা দেয়া হবে না।
ইকোনমিক প্রোগ্রাম:
কানাডা সরকার আগামী এক বছরে ইকোনমিক প্রোগ্রাম মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০০ অভিবাসী নেবে। ইকোনমিক প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে, ফেডারেল হাই স্কিলড প্রোগ্রামে ৮১,৪০০ জন, আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামে ২,০০০ জন, ফেয়ার গিভার প্রোগ্রামে ১৪,০০০ জন, ফেডারেল বিজনেস প্রোগ্রামে ৭০০ জন, প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামে ৬১,০০০ জন ও কুইবেক স্কিলড ওয়ার্কার অ্যান্ড বিজনেস প্রোগ্রামে ৩২,৫০০ জন।
ফ্যামিলি প্রোগ্রাম:
আগামী এক বছরে ফ্যামিলি প্রোগ্রামের অধীনে নেয়া হবে ৮৮,৫০০ জন। ফ্যামিলি প্রোগ্রামের মধ্যে স্পাউজ, পার্টনার ও চিলড্রেন প্রোগ্রামে ৬৮,০০০ জন, প্যারেন্টস ও গ্রান্ড প্যারেন্টস ২০,৫০০ জন, রিফিউজি অ্যান্ড প্রোটেক্টেড পারসন প্রোগ্রামে ৪৫,৬৩০ জন, হিউম্যানিটেরিয়ান প্রোগ্রামে ৪,২৫০ জন।