বাংলাদেশের পুরনো ঢাকার চকবাজারে ভায়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আবারো আলোচনা হচ্ছে আবাসিক ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভবনগুলোতে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে তদারক করা সম্ভব হয়না।
আর এ সুযোগেই ফায়ার ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক, বিভিন্ন ধরণের কারখানা। যদিও এসব অনুমোদনহীন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের অভিযান চালানোর খবর আসে গণমাধ্যমে কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশে প্রতিনিয়ত নিজ উদ্যোগে বাড়িঘর তৈরির কাজ চলছেই। আর সেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থপতি কিংবা প্রকৌশলীদের সংশ্লিষ্টতা থাকে না। ফলে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা উপেক্ষিতই থেকে যায় ।স্থপতি ইকবাল হাবিব বলছেন, শুরুতেই নিজের বাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টিতে নিজেকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি। এগুলো হলো:
১. ভবন অনুমোদন প্রক্রিয়াকে না এডড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ ভবনটিতে নিরাপদ করতে একটি নকশা তৈরি করে সেটি যথাযথভাবে অনুমোদন।
২. স্থপতি ৩. ভবনের প্রকৌশলগত বিষয়গুলোকে অবহেলা না করা। যেমন কোথায় সিঁড়ি হবে, আগুন লাগলে কোন পথ দিয়ে কিভাবে নিরাপদে বের হবে।
৪. নিরাপত্তার খাতিরে দমকল বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া এবং সেগুলো ব্যবহারবিধি জানা থাকতে হবে।
৫. ভবন তৈরি এখন বেশি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার কারণে সতর্ক থাকা ও যথাযথ পেশাজীবীদের সহায়তা নেয়া।
বাংলাদেশের ন্যাশনাল ফায়ার কোড প্রণয়নের সাথে জড়িত ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো: মাকসুদ হেলালী।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালেই বাংলাদেশে একটি আইন হয়েছে এবং পরে সেটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত আবাসিক ভবনের ক্ষেত্রে দুই ধরণের বিষয় আছে : একটি হলো ছয় তলা বা তার চেয়ে কম কিংবা ছয় তলার বেশি। ছয় তলার বেশি হলে সেখানে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণের জন্য অনেক কিছু থাকতে হবে। সাধারণভাবে কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ভবন থেকে বেরিয়ে আসার পথ। অর্থাৎ আগুন লাগলে মানুষ যাতে বেরিয়ে আসতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এক্ষেত্রে বেরিয়ে আসার পথ অর্থাৎ সিঁড়ির একটি নির্দিষ্ট সাইজ আছে। এছাড়া এক ভবন থেকে আরেক ভবনের দূরত্ব। আবার দেখতে হবে একটি ফ্লোরে আগুন লাগলে অন্য ফ্লোরগুলো থেকে যেনো সবাই সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে। সিঁড়ি করার যেমন নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে, তেমনি লিফট থাকলে সেটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি জানান, এর বাইরে জানালার গ্লাসসহ এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্নি প্রতিরোধের বিষয়গুলো বিবেচনা নিতে হবে।
মিস্টার হেলালীর মতে, এখন বাড়ি নির্মাণের সময় আকর্ষণীয় করতে গিয়ে এমন অনেক কিছু সংযুক্ত করা হয় যেগুলো আগুন লাগলে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা থাকা ও প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য পানির উৎস রাখাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, বাড়িতে বারান্দা থাকলে দুর্ঘটনায় ক্ষতির আশঙ্কা এমনিতেই একটু কমে যায়, নকশার সময় সেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। সূত্র: বিবিসিও প্রকৌশলীদের না এড়াানো। ভবন নকশা প্রণযন ও সে অনুযায়ী বাড়তি নির্মাণে যথাযথ ব্যক্তিদের জড়িত রাখলে দুর্ঘটনার ভয় এমনি কমে যায়।এক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর চিন্তার কারণে অনেক সময় পুরো বাড়িই ঝুঁকির মুখে থাকে।